জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বাংলাদেশী আমেরিকানদের বিক্ষোভ
- যুক্তরাষ্ট্র
জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেজ এই মুহূর্তে চার দিনের সফরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তাঁর বাংলাদেশ সফরের পূর্বাহ্নে নিউ ইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করে মহাসচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী আমেরিকান।
নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর শাসনামলে বাংলাদেশ মানবাধিকার মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি, নারী ও শিশু নির্যাতন বৃদ্ধি, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের উপর হামলা, সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন, মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার খ্যাত ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার সহ মুক্তিযুদ্ধের সকল স্থাপনা ধ্বংস এবং বাংলাদেশের সাবেক সরকারের বিরূদ্ধে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের পক্ষপাতমূলক তদন্ত প্রতিবেদনের বিরূদ্ধে এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।
গত ১০ মার্চ সোমবার দুপুরে নিউ ইয়র্কস্থ জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে প্রবাসী বাংলাদেশী আমেরিকানদের ব্যানারে আয়োজিত এই বিক্ষোভ সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত সংগঠন ‘একাত্তরের প্রহরী’, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন সংগঠন, লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ দুই শতাধিক সাধারণ নাগরিক উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে উপস্থিত বক্তারা বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিস্থিতির জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার টুর্ক-এর বিরূদ্ধে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের পক্ষে নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়ার অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিজ্ঞানী, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী বলেন, কোনো তদন্ত ছাড়াই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একপেশে রিপোর্ট প্রদান করেছেন ভলকার টুর্ক। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সম্প্রতি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় শেখ হাসিনা সরকারকে সহায়তা না করার জন্য সেনাবাহিনীকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যদি তার পরামর্শ গ্রহণ না করে তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের চুক্তি বাতিল করার হুমকিও দিয়েছিলেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ২০২৪ সালের জুলাই ও অগাস্টে বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের জন্য যে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল তার সঙ্গে ভলকার টুর্ক যুক্ত। ড. নবী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ভলকার টুর্ক এর এই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে তার অপসারণ দাবী করেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি কৃষিবিদ ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতন, হত্যা, সন্ত্রাস, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, নারী ও শিশু ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনাগুলোর জন্য মৌলবাদী সংগঠন জামাত, হিজবুত তাহেরি, আইএস, খেলাফত, ইত্যাদি ইসলামী জঙ্গী সংগঠনগুলোর মদদপুষ্ট বর্তমান অস্থায়ী সরকারকে দায়ী করে ড. ইউনুসের অপসারণ দাবী করেন।
আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের মধ্যে বক্তৃতা করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মাসুদুর রহমান, কৃষিবিদ ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দুরুদ মিয়া রুনেল, আইন বিষয়ক সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ বখতিয়ার আলী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী, স্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান মিয়া, সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ শাহনাজ, জ্যাকসন হাইটস শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর কায়সার।
স্বনামধন্য শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক, একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সভাপতি ড. আব্দুল বাতেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শরাফ সরকার, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও শিক্ষক এ্যানি ফেরদৌস, সাংবাদিক ও কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট মিনহাজ আহমদ, লেখক ও সাংবাদিক আসলাম আহমাদ খান, মানবাধিকার কর্মী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা রওশন আরা নিপা, উপস্থাপক ও আবৃত্তিকার শারমিন নিহার নীরু, একটিভিস্ট ঝর্ণা চৌধুরী ও জয়তুর্য চৌধুরী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী, ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা ও ২ লক্ষ নারী ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক অপশক্তিকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধের ঘোষণা দেন।
সমাবেশ শেষে জাতিসংঘের মহাসচিব এর কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ১৩ পৃষ্ঠার এই স্মারকলিপিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের বিপক্ষে প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেন। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেজের বাংলাদেশ সফরকালে দেওয়া এই স্মারকলিপিটি বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আয়োজকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।