নিউইয়র্ক বঙ্গবন্ধু বইমেলা ২০২৫ অংশগ্রহণকারীর প্রতিক্রিয়া-৩
- নিউ ইয়র্ক
- 5 minutes read
আগামী ২৪, ২৫ মে শনি এবং রবিবার কুইন্সের ‘জয়া হলে’ 63-108 Woodhaven Blvd, Rego Park, NY 11374
অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলা- ২০২৫’।
২৪ মে শনিবার সকাল ১১টায় বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রবীণ সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ এবং মুক্ত চিন্তক বেলাল বেগ।
আমার আজকের লেখা বরেণ্য এ দু’জন মানুষকে নিয়ে অংশগ্রহণকারীর প্রতিক্রিয়া। লিখা শুরুর পর মনে হলো প্রতিক্রিয়া নয়, লেখার শিরোনাম হওয়া উচিত বরেণ্য এ দু’জন মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক প্রযোজক, চারণ সাংবাদিক ও কবি বেলাল বেগ। এক সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল ‘জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা’— যেটি শুরু হয়েছিল বেলাল বেগের হাত ধরে। বেলাল বেগের বড় পরিচয় হচ্ছে, তিনি একজন মুক্ত চিন্তার মানুষ। তাঁর মটো হচ্ছে মধ্যযুগের কবি ঝড়ু চন্ডিদাস রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক বাণী—- ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’।
যেখানেই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সেখানেই বেলাল বেগ। নিউ ইয়র্কের উদীচী স্কুলে স্বেচ্ছাশ্রমে শিশুদেরকে বাংলা শেখাতেন। শিশুর মতো সরল মানুষটি শিশুদের সঙ্গে মিশে যেতেন শিশুর মতো।
বেলাল বেগ প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মানের অবিচল যোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের অতন্দ্র প্রহরী, যিনি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন , মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে ধারণ করেন অন্তরের গভীর অন্তস্থলে।
বরেণ্য সাংবাদিক, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ। সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহকে নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্য, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তরুণ একজন সাংবাদিক হিসেবে জীবিকার সন্ধানে চলে যান রাজধানী শহর ঢাকায়। সেখানে সাংবাদিকতার চাকরিও পেয়ে চান। সদ্য স্বাধীন দেশে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন কর্মসূচির সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্ব পরে তার উপর। বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘে যোগ দেয়ার সংবাদ সংগ্রহ করতে যান নিউইয়র্কে। সেবার প্রথমবার জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। জাতির পিতার বাংলায় দেয়া সেই ঐতিহাসিক ভাষণের সাক্ষী তিনি। এক পর্যায়ে সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সুযোগ পান। দেশে ফিরে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন। তখন পাকাপাকিভাবে চলে আসেন নিউইয়র্কে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা ভাষার প্রথম সাপ্তাহিক ছিল ‘দিগন্ত’। দ্বিতীয় পত্রিকা হিসেবে সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ ‘প্রবাসী’ নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা বের করেন। পরে তা সাপ্তাহিক হিসেবে বেশ কয়েক বছর প্রকাশিত হয়। সাপ্তাহিক ‘প্রবাসী’ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে সবসময় আপসহীন ছিল। মূলত সেই পথ ধরেই পরবর্তীকালে নিউইয়র্ক থেকে অনেকগুলো বাংলা পত্রিকা প্রকাশিত হয়’।
৮০ বছর পার করা এই মানুষটি প্রমাণ করেছেন বয়স একটি সংখ্যা মাত্র। ভেতরে তারুণ্য লালন করা এই মানুষটিকে নিউ ইয়র্কের প্রতিটি অনুষ্ঠানে এখনও নিয়মিত দেখা যায়। প্রতিবাদে, সংগ্রামে, বাঙালির আনন্দযজ্ঞে সর্বত্রই উনার সরব উপস্থিতি। এই তো কয়দিন আগে নিউ ইয়র্কের সার্বজনীন মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রথম সারিতে ছিলেন উনি। বইমেলা, লালন উৎসব, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আর আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারির মিছিলের প্রথম সারির যোদ্ধা তিনি।
গুণী এই দুইজন মানুষকে ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বইমেলা’র উদ্বোধক হিসেবে বেছে নেওয়ায় আমি আনন্দিত।
আসলাম আহমাদ খান, ১৭ মে ২০২৫, নিউ ইয়র্ক॥