গাজায় এক-তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনি দিনের পর দিন খাদ্যহীন: ইউনিসেফ
- আন্তর্জাতিকলিড
- 1 minute read
গাজা উপত্যকায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ টানা কয়েকদিন ধরে খাদ্য না পেয়েই দিন পার করছেন বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের শিশু-বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। শুক্রবার সংস্থাটি জানিয়েছে, দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা চরমে পৌঁছেছে এবং দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে হাজার হাজার শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
ইউনিসেফের মানবিক ত্রাণ ও সরবরাহ বিভাগের উপ-নির্বাহী পরিচালক টেড চাইবান এক বিবৃতিতে বলেছেন, গাজায় এখন ৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি শিশু চরম পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে।
সম্প্রতি ইসরায়েল, পশ্চিম তীর ও গাজা সফর করা এই কর্মকর্তা বলেছেন, এখন আমরা একটি সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। যেসব সিদ্ধান্ত আজ নেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করবে হাজার হাজার শিশু বাঁচবে কি না।
তিনি বলেন, গাজার পুষ্টিহীনতার মাত্রা এখন ‘দুর্ভিক্ষ সূচক’ ছাড়িয়ে গেছে।
শুক্রবার গাজার আল-শিফা হাসপাতালে ১৭ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি কিশোর আতেফ আবু খাতের অপুষ্টিতে মারা গেছে। যুদ্ধে আক্রান্ত হওয়ার আগে সে সুস্থ ছিল বলে পরিবারের বরাত দিয়ে জানানো হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে অন্তত ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি শিশু। অনেক লাশ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এখন পর্যন্ত অপুষ্টি ও অনাহারে ১৬২ জন প্রাণ হারিয়েছে। এদের মধ্যে ৯২ জনই শিশু।
খান ইউনিসে আশ্রয় নেওয়া গাজার সাংবাদিক আহমেদ আল-নাজ্জার বলেন, এটা কেবল অনিরাপত্তা বা বোমার ভয় নয়, বরং পুরোপুরি একটি পরিকল্পিত ইসরায়েলি গণহত্যার বিশৃঙ্খলা।
তিনি বলেন, সাধারণ রাস্তায় হেঁটে ময়দা বা খাদ্যসামগ্রী কিনতে যাওয়ার মাঝেও মানুষ নিশ্চিত না থাকে যে জীবিত ঘরে ফিরতে পারবে কি না।
গাজার ‘নিরাপদ’ অঞ্চলগুলোতেও পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। বরং এসব এলাকাতেই বারবার হামলা হচ্ছে বলে জানান আল-নাজ্জার।
চলতি বছরের মার্চে ইসরায়েল গাজায় খাদ্যবাহী যানবাহনের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। মে মাসের শেষ দিকে কিছুটা শিথিলতা এলেও বিতরণ ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয় গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর হাতে। এটি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একটি সংস্থা।
তবে জিএইচএফ-কে ঘিরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেসামরিক মানুষকে টার্গেট করার অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘ বলছে, এই সংস্থার বিতরণকেন্দ্রগুলোতে খাদ্য নিতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
গোপন তথ্য ফাঁসকারী এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এসব মৃত্যু অনেকক্ষেত্রে ইসরায়েলি সেনা বা জিএইচএফ-এর নিয়োজিত মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ঘটেছে।
ইউনিসেফের চাইবান বলেন, এখন গাজায় যা ঘটছে, তা একেবারেই অমানবিক। গাজার শিশুদের এখন যেটা দরকার, তা হলো একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং রাজনৈতিক সমাধানের পথ।
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে প্রতিটি প্রবেশদ্বার, প্রতিটি সরবরাহপথ এবং প্রতিটি ত্রাণপদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে। বিমান থেকে খাদ্য ফেলা একটি অস্থায়ী সমাধান হতে পারে কিন্তু তা কখনোই সড়কপথে খাদ্যবাহী ট্রাকের বিকল্প হতে পারেন।
চাইবান জানান, গাজায় প্রতিদিন অন্তত ৫০০টি মানবিক ও বাণিজ্যিক ট্রাক প্রবেশের অনুমতি না দিলে সংকট মোকাবিলা অসম্ভব হয়ে পড়বে।