যুক্তরাজ্যে অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন: কঠোর হচ্ছে ভিসা
- আন্তর্জাতিক
- 1 minute read
যুক্তরাজ্যে অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন: কঠোর হচ্ছে ভিসা ও আইএলআর নিয়ম, কেয়ার হোমে নিয়োগেও আসছে নিষেধাজ্ঞা
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ব্যবস্থায় আবারও বড় ধরনের পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে লেবার সরকার। আগামীকাল সোমবার (১২ মে) হাউস অব কমন্সে ‘সীমান্ত নিরাপত্তা, আশ্রয় ও অভিবাসন বিল’ (Border Security, Asylum and Immigration Bill) পেশ করার কথা রয়েছে। সরকারের নতুন প্রস্তাবনায় দক্ষ কর্মী ভিসার জন্য যোগ্যতা বাড়িয়ে স্নাতক স্তরে উন্নীত করা, ইংরেজি ভাষার শর্ত কঠোর করা এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য বসবাসের অনুমতি (আইএলআর) পাওয়ার নিয়ম কঠোর করার কথা বলা হয়েছে।
রিফর্ম ইউকের সাম্প্রতিক নির্বাচনী সাফল্যের পর অভিবাসনবিরোধী আবহে লেবার সরকারের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সরকারের দাবি, এই পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য হলো দক্ষ অভিবাসী বৃদ্ধি এবং কম দক্ষ কর্মীদের প্রবেশ হ্রাস করা। সেইসঙ্গে অবৈধভাবে কর্মী নিয়োগকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যে কেয়ার হোমে বিদেশি কর্মী নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার বিষয়টি বিবেচনায় আছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ কর্মী উৎস থেকে নিয়োগের প্রতি গুরুত্ব বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন নিষেধাজ্ঞা কেয়ার খাতের জন্য সংকট সৃষ্টি করতে পারে, যেহেতু এই খাত দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক নিয়োগের উপর নির্ভরশীল।
যারা ইতোমধ্যে কেয়ার ওয়ার্কার ভিসায় যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন, তাদের জন্য নতুন নিয়ম একাধিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি, কাজের ধারাবাহিকতা এবং বেতনসীমা পূরণের বিষয়গুলো এখন আরও বেশি গুরুত্ব পাবে।
নতুন নিয়মে আরও বলা হয়েছে, আইএলআর (Indefinite Leave to Remain) পাওয়ার নিয়মও কঠোর করা হবে। যদিও যারা বর্তমানে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন, তাদের জন্য তাৎক্ষণিক কোনও পরিবর্তন আসছে না। তবে ভবিষ্যতে আবেদনকারীদের জন্য বসবাসের সময়সীমা, ভাষা দক্ষতা ও আর্থিক যোগ্যতা আরও কঠোরভাবে যাচাই করা হতে পারে।
সরকারের প্রস্তাবে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিদেশি অপরাধীদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়েও জোর দেওয়া হচ্ছে এবং ‘বিশেষভাবে গুরুতর অপরাধ’-এর সংজ্ঞা সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে অনেক অভিবাসীর স্থায়ী বসবাসের সম্ভাবনা অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে।
এদিকে, লন্ডনের অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, “ব্রিটেনের অভিবাসন ব্যবস্থা সবসময়ই অস্থির। নতুন নিয়ম দ্রুত বাস্তবায়নের ফলে অনেক অভিবাসী সংকটে পড়ছেন। বিশেষ করে গত তিন বছরে বাংলাদেশ থেকে আসা কর্মী, শিক্ষার্থী ও স্পাউস ভিসাধারীদের এক উল্লেখযোগ্য অংশ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।”
সরকারের এই সংস্কারের অংশ হিসেবে শ্রমবাজার বিশ্লেষণে ‘লেবার মার্কেট অথেনটিকেশন গ্রুপ’ গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই গোষ্ঠীতে শিল্পখাত, দক্ষতা সংস্থা, সরকার ও মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল থাকবে, যারা বিদেশি কর্মী নির্ভরতা কমাতে কৌশল প্রণয়ন করবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতির এই পরিবর্তন বিদেশি কর্মীদের জন্য নতুন বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে দক্ষ কর্মী না হলে ব্রিটেনে এসে কাজ করা এখন আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তবে একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারকে শক্তিশালী করতে এই পদক্ষেপ ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।