বৈধ কাগজ থাকা সত্ত্বেও জমিতে প্রবেশ করতে পারছেন না মুক্তিযোদ্ধা, জবরদখল চক্রের সঙ্গবদ্ধ হামলার অভিযোগ
- ঢাকা
- 2 minutes read
নিজস্ব প্রতিবেদক, কিশোরগঞ্জ:
কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও নিজস্ব জমিতে প্রবেশ করতে পারছেন না। অভিযোগ, একটি সংঘবদ্ধ চক্র তার জমি দখলে নিয়ে জোরপূর্বক সেখানে ঈদগাহ ময়দান ও খেলার মাঠ বানাতে চায়। চাঁদা না দেওয়ায় এই চক্রটি মুক্তিযোদ্ধার উপর একাধিকবার সঙ্গবদ্ধভাবে হামলা চালিয়েছে এবং পরিবারসহ তাকে নিরাপত্তাহীনতায় ফেলেছে।
ভুক্তভোগী আবু আনিস ফকির একজন সাবেক সেনা সার্জেন্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি জানান, প্রায় ৩৮ বছর আগে গুজাদিয়া মৌজায় ১ একর ১৬ শতাংশ জমি কিনে দীর্ঘদিন ধরে নিজের নামে রেজিস্ট্রিকৃত সাফ কবলা দলিল, হোল্ডিং নম্বর, পর্চা ও জমাখারিজ করেছেন। নিয়মিত খাজনাও পরিশোধ করে আসছেন তিনি, এমনকি ওই জমির ভিত্তিতে ব্যাংক থেকেও ঋণ গ্রহণ করেন।
কর্মজীবনে ব্যস্ত থাকায় তিনি এতদিন জমিটি ব্যবহার করতে পারেননি। সম্প্রতি জমি মেপে সীমানা নির্ধারণ করে ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিলে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র তার কাজে বাধা দিতে শুরু করে। তার অভিযোগ, তারা তিন লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে, যা তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা জমির গাছ কেটে নেয় এবং কর্মরত শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখায়।
তিনি জানান, ওই জমিতে কিছু নির্মাণ করতে গেলেই চক্রটি সঙ্গবদ্ধভাবে হামলা চালায়। তারা প্রায়শই দলবল নিয়ে গিয়ে গালাগালি, হুমকি এবং কখনও কখনও ধাক্কাধাক্কির মতো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এতে তার পরিবারসহ আশপাশের মানুষজনও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয়, এসব ঘটনার পরও পুলিশ কোনো অভিযোগ গ্রহণ করছে না, ফলে তিনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ হলো, জমির উপর জোর করে ঈদগাহ মাঠ ও খেলার মাঠ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে চক্রটি। তিনি বলেন, “ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিকে জোর করে জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী স্থান বানানোর চেষ্টা সম্পূর্ণ বেআইনি। ঈদগাহ বা খেলার মাঠ করার জন্য সরকারি বা খাসজমি রয়েছে, সেখানে না গিয়ে একটি মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্নের জমিকে টার্গেট করা চরম অন্যায়।”
আবু আনিস ফকির দাবি করেন, তিনি আদালতে মামলা দায়ের করলে সেখানে জমিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। কিন্তু সেই আদেশ মানছে না দখলদার গোষ্ঠী। বরং তারা গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে মানববন্ধনের মতো নাটকীয় কার্যকলাপ করে নিজেরাই মালিকানা দাবি করছে।
তিনি বলেন, “আমি প্রতিবাদ করায় আমার ও আরও ছয়জন নিরীহ ব্যক্তির নামে মিথ্যা মামলা করেছে চক্রটি। পুলিশ আমার পক্ষের কোনো অভিযোগ নিচ্ছে না। এই অবিচারে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।”
৮০ বছর বয়সী এই মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ—তাঁর ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে, দুইবার ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছে। তিনি বলেন, “জমিটি আমি অনেক কষ্টে কিনেছি, স্বপ্ন ছিল আমার পাঁচ ছেলেকে নিয়ে এখানে বাড়ি করে থাকব। অথচ আজ সেখানে দাঁড়ানোই যেন অপরাধ!”
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি সরকারের ঊর্ধ্বতন প্রশাসন, মানবাধিকার সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তার মতে, “এই জমি রক্ষা করা শুধু আমার ব্যক্তিগত অধিকার নয়, এটি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জাতির সম্মান রক্ষার লড়াই।”
এই ঘটনায় কিশোরগঞ্জের মানবাধিকার সংগঠনগুলো ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, আইনের শাসন ও ভূমি অধিকারের স্বার্থে এই ঘটনায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।