‘কিরা কিরা’ নামের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি: শিশুদের ব্যতিক্রমী নামকরণে নিষেধাজ্ঞা জাপানে
- আন্তর্জাতিক
- 2 minutes read
জাপানে এখন থেকে আর শিশুদের ‘পিকাচু’, ‘হ্যালো কিটি’ বা ‘নাইকি’-এর মতো ব্যতিক্রমী নামে নাম রাখা যাবে না—বিশেষত যদি নামটির উচ্চারণ ও কানজি বানানে অসামঞ্জস্য থাকে। সম্প্রতি দেশটির সরকার এমন একটি আইন কার্যকর করেছে, যার মাধ্যমে এসব ‘কিরা কিরা’ নাম নিবন্ধনে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
‘কিরা কিরা’ অর্থাৎ ‘ঝকঝকে’ বা ‘আকর্ষণীয়’ নামে পরিচিত এসব নাম মূলত অস্বাভাবিক ও অপ্রচলিত উচ্চারণে গঠিত। ১৯৮০ দশক থেকে জাপানের পপ সংস্কৃতি, অ্যানিমে ও ভিডিও গেমস জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব নামের চল শুরু হয়। অভিভাবকেরা প্রিয় চরিত্রের নামে সন্তানদের নাম রেখে তাতে এমন কানজি যোগ করেন, যা প্রচলিত পাঠের সঙ্গে মিল না থাকলেও কাঙ্ক্ষিত উচ্চারণে পৌঁছে যায়।
নতুন আইন কী বলছে?
২০২৩ সালের ২ জুন পাস হওয়া পরিবার নিবন্ধন আইনের সংশোধিত রূপ ২০২৫ সালের ২৬ মে থেকে কার্যকর হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে শিশুর নামের সঙ্গে উচ্চারণ নির্দেশক ‘ফুরিগানা’ (হিরাগানা বা কাটাকানায় লেখা উচ্চারণ) সংযুক্ত করতে হবে। এতে করে প্রশাসন নামের বানান ও উচ্চারণে অমিল শনাক্ত করতে পারবে।
যেসব নামের উচ্চারণ সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে, তাদের ডাকযোগে জানানো হবে এবং এক বছরের মধ্যে সংশোধন জমা দিতে হবে। তবে পূর্বে নিবন্ধিত ব্যতিক্রমী নামের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না, তবে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না মিললে অভিভাবকদের স্থানীয় প্রশাসনে হাজির হতে হতে পারে।
সমস্যার মূলে কী?
ভাষাবিদদের মতে, কিরা কিরা নামগুলো পড়তে গিয়ে জাপানিরাও বিভ্রান্ত হন। বিদ্যালয়, হাসপাতাল ও প্রশাসনিক কাজে এই নামগুলো সমস্যা তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, ‘নাওশিকা’ নামটি অনেকে ‘ইমাশিকা’ পড়ে ফেলেন—যেটি একেবারেই ভিন্ন অর্থ দেয়।
টোকিওর টেম্পল ইউনিভার্সিটির ভাষাবিদ জন মাহার বলেন, “শিক্ষকেরা নাম ধরে ডাকার সময় বারবার থেমে যেতে বাধ্য হন। কারণ নামের উচ্চারণ তাদের বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।” তিনি আরও জানান, কিরা কিরা নাম একটি প্রজন্মগত সংস্কৃতির পরিবর্তনের প্রতিফলন।
কেন এমন নাম দেওয়া হচ্ছে?
ভাষাবিদদের মতে, ঐতিহ্যবাহী নামকরণের বিরুদ্ধে একধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ হিসেবেই কিরা কিরা নামের প্রচলন ঘটেছে। ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্য ও সৃজনশীলতা প্রকাশের লক্ষ্যে অনেক অভিভাবক ব্যতিক্রমী নাম রাখতে চান। এই প্রবণতা কেবল জাপানে নয়, সারা বিশ্বেই দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘হাংগার গেমস’ সিরিজের জনপ্রিয়তায় বহু অভিভাবক তাদের সন্তানের নাম রেখেছেন ‘ক্যাটনিস’।
ভবিষ্যৎ কী বলছে?
ভাষাবিদ ও লেখক অ্যাডাম আলেক্সিচ মনে করেন, এই নতুন নিয়ম কিরা কিরা নামের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারে, তবে পুরোপুরি থামাবে না। বাবা-মায়েরা নতুন নতুন উপায় খুঁজে নেবেন—হয়তো নতুন ধরনের কানজি বেছে নেবেন, নয়তো পুরো নামটাই কাটাকানায় লিখবেন।
তাঁর ভাষায়, “ব্যক্তিত্ব প্রকাশের ইচ্ছা দীর্ঘমেয়াদে জিতবেই। পরিবর্তন চলতেই থাকবে।”
সূত্র: আল-জাজিরা