মুন্সিগঞ্জে লঞ্চে দুই তরুণীকে মারধর: ‘বড় ভাই’ সেজে পেটালেন নেহাল আহমেদ আটক- পুলিশ
- ঢাকা
- 2 minutes read
মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে যাত্রাবিরতির সময় একটি লঞ্চে দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে বেল্ট দিয়ে মারধরের ঘটনায় নেহাল আহমেদ ওরফে জিহাদ নামে এক তরুণকে আটক করেছে সদর থানা পুলিশ। আজ শনিবার দুপুরে তাকে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম।
নেহাল আহমেদ মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি ‘এমভি ক্যাপ্টেন’ নামের লঞ্চের সামনের অংশে দাঁড়িয়ে দুই তরুণীকে বেল্ট দিয়ে আঘাত করছেন, আর আশপাশের লোকজন সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে উল্লাস করছেন।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, আশপাশের মানুষ নানা রকম স্লোগান ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে, যখন একজন তরুণী লাঞ্ছিত হচ্ছেন।
ওসি সাইফুল আলম জানান, ঘটনার সময় লঞ্চটিতে কেরানীগঞ্জ থেকে ২০০-৩০০ জন যাত্রী নৌভ্রমণে বের হন। রাত আটটার দিকে নাশতার জন্য লঞ্চটি মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে থামলে স্থানীয় কিছু লোকজন তরুণ-তরুণীদের ‘অস্বাভাবিক’ অবস্থায় দেখতে পেয়ে লঞ্চে প্রবেশ করেন এবং তল্লাশি চালান। তখন লঞ্চে কিছু আপত্তিকর পরিস্থিতি দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়ে স্থানীয় জনতা। এরই প্রেক্ষিতে ঘটে হামলা ও মারধরের ঘটনা।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন আটক নেহাল আহমেদ। তিনি দাবি করেন, “অনেক লোক তরুণীদের আচরণ ও পোশাকে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছিল। সেই মুহূর্তে ওই তরুণীরা আমাকে বড় ভাই হিসেবে তাদের বাঁচানোর অনুরোধ করেন। আমি কেবল পরিস্থিতি বোঝাতে গিয়ে ‘শাসন’ করেছি। আমি বুঝতে পারিনি এটা এভাবে দেখা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি যা করেছি সেটা ঠিক হয়নি। আমি এর জন্য অনুতপ্ত।”
পুলিশ জানায়, এখনো ভুক্তভোগী তরুণীদের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়নি। একজন তরুণীকে আইনি সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি থানায় আসবেন না বলে জানিয়েছেন। তার মোবাইল ফোনটিও বর্তমানে বন্ধ।
ওসি সাইফুল আলম বলেন, “এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। কেউ না দিলে পুলিশ নিজে বাদী হয়ে মামলা করবে। ইতিমধ্যে নৌ পুলিশ লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।”
এই ঘটনায় সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, লঞ্চে তরুণ-তরুণীদের আচরণ আপত্তিকর হলেও একজন সাধারণ নাগরিক কীভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারেন? আর আশপাশের মানুষ কেনো এই নৃশংস দৃশ্য ভিডিও করে ‘উল্লাস’ করছিলেন?
নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, “এটি সরাসরি নারী নির্যাতন ও সামাজিক লাঞ্ছনার প্রকাশ। ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়া আরও একধরনের সহিংসতা। আইন নিজের হাতে নেওয়া বা তথাকথিত ‘শাসন’—এই চিন্তাধারাই বিপজ্জনক। দোষী যেই হোক, তার বিচার হোক আইনের মাধ্যমে।”