নিউইয়র্ক বঙ্গবন্ধু বইমেলা ২০২৫ অংশগ্রহণকারীর প্রতিক্রিয়া-২

নিউইয়র্ক বঙ্গবন্ধু বইমেলা ২০২৫ অংশগ্রহণকারীর প্রতিক্রিয়া-২

বইমেলা হচ্ছে আলোকিত মানুষের উৎসব, মেলা থেকে জ্ঞানের আলো আহরণ করে, সে আলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উৎসব। আলোর উৎস সূর্য, আর বাংলা বইমেলার উৎসমূল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মানুষের উপর বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে। তাদের প্রতিটি রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপে পূর্ব বাংলার মানুষদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে ট্রিট করতে থাকে। প্রথম বড় আঘাতটি আসে ভাষার উপর। ১৯৪৮ সালে বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত শুরু করে। প্রতিবাদে বাঙালিরা আন্দোলনে যোগ দেয়। সে আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানের গভর্ণর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তান আসেন। ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ভাষণদানকালে বাংলা ভাষার বিরোধিতা করে বলেন, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। যারা এ ব্যাপারে বিভ্রান্তির-সৃষ্টি করছেন তাঁরা বিদেশী রাষ্ট্রের অর্থভোগী চর তথা পাকিস্তানের শত্ৰু। জিন্নাহর এই বক্তব্যে ছাত্ররা না’ ‘না বলে এর প্রতিবাদ করে। আর ছাত্র সমাজের এই সমবেত প্রতিবাদে নেতৃত্ব প্রদান করেন শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দিন আহমদ ও আব্দুল মতিন।
এ প্রসঙ্গে জিল্লুর রহমান এক নিবন্ধে বলেছেন :
..ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে তিনি (জিন্নাহ) বলেছিলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। জিন্নাহ সাহেবের এ উক্তির সাথে সাথেই জনতার মধ্য থেকে প্রতিবাদ উঠেছিল। সকলকে আমি চিনতাম না। কিন্তু অনেকের মধ্যে আমাদের বঙ্গবন্ধু, সেদিনকার মুজিব ভাই-তিনিই সকলের আগে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, ‘না’ বাংলাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে।
যদিও শেখ মুজিবের এই না’, ‘না’ প্রতিবাদ সেদিন রেসকোর্সের বিশাল জনসমুদ্রের গুঞ্জনে চাপা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হলে যখন জিন্নাহ আবার ঘোষণা দিলেন, “Urdu and Urdu shall be the state language of Pakistan”,
আর এবার শুধু শেখ মুজিব, আব্দুল মতিন বা তাজউদ্দিন নয় বরং কার্জন হলের সকল ছাত্রের কণ্ঠে তা ধ্বনিত হল।
দেশ বিভাগের পর ভাষার দাবীকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন শুরু হয়, সেটা দমন করার জন্য ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুকে কারারুদ্ধ করা হয়। কারাগারে থেকেও তিনি চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যমে আন্দোলনের নির্দেশনা দিয়েছেন।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বাররা বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার।
ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বাঙালির আত্মজাগরণের নতুন সংগ্রাম। এই জাগরণকে ধীরে ধীরে ও ধাপে ধাপে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নেন শেখ মুজিবুর রহমান। যে স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক আমরা, সে দেশটির জন্ম হয়েছে ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে।
আমরা যে গর্ব করে বলি ভাষার নামে দেশ, দেশের নামে ভাষা, সে বাংলাদেশ শব্দটি প্রথম উচ্চারণ করেছিলেন বাংলাদেশের জন্মদাতা, জাতির পিতা শেখ মুজিব।
কাজেই বঙ্গবন্ধুর নামে বইমেলার নামকরণ করার অর্থ হলো ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদ আর বাংলাদেশের সকল মুক্তিকামী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। এমন একটি আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ‘একাত্তরের প্রহরী’র সকল সদস্যের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

“বঙ্গবন্ধু বইমেলা ২০২৫” সফল হোক॥

আসলাম আহমাদ খান, ১৫ মে ২০২৫, নিউ ইয়র্ক।