যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন, নাগরিকত্ব পেতে লাগবে ১০ বছর স্থায়ী বসবাস

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন, নাগরিকত্ব পেতে লাগবে ১০ বছর স্থায়ী বসবাস

যুক্তরাজ্যের নতুন সরকার, প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের নেতৃত্বে অভিবাসন নীতিমালায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। সোমবার (১৩ মে) বিষয়ক একটি ৮২ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র প্রকাশ করে এসব সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর আগের দিন রোববার পার্লামেন্টে অভিবাসন নীতির কড়াকড়ি আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো, যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব পেতে হলে এখন থেকে কমপক্ষে ১০ বছর দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে। আগে এই সময়সীমা ছিল ৫ বছর। পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার মানদণ্ডও আরও কঠোর করা হয়েছে। আবেদনকারীদের পাশাপাশি তাদের নির্ভরশীল প্রাপ্তবয়স্কদেরও ইংরেজি ভাষার মৌলিক দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে।

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, বিদেশি কর্মী রিক্রুটমেন্ট কমাতে হবে। নিয়োগকর্তাদের স্থানীয় শ্রমবাজারের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কম দক্ষ কর্মীদের ক্ষেত্রে ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া কঠোর করা হচ্ছে। দক্ষ কর্মী ক্যাটাগরিতে ভিসা প্রদানের মানদণ্ড আরও কড়াকড়ি করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেন্ট কুপার জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই কম দক্ষ কর্মী ভিসার সংখ্যা ৫০ হাজার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা ভিসাও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কর্মী ভিসার সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

নতুন নীতিমালায় শিক্ষার্থী ভিসার সংখ্যা আরও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। শীঘ্রই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। অন্যদিকে, পারিবারিক ভিসার ক্ষেত্রেও নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। যারা পারিবারিক ভিসায় যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করবেন, তাদের আইন-শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করলে দ্রুত ফেরত পাঠানোর বিধান রাখা হয়েছে।

বর্তমানে শুধু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশিদের ফেরত পাঠানোর নিয়ম কার্যকর রয়েছে। সাধারণত এক বছরের বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। নতুন নীতিতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার রোববার পার্লামেন্টে বলেন, “অভিবাসন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ—কাজ, পরিবার ও পড়াশোনার মানদণ্ড আরও কঠোর করা হবে, যেন আমাদের হাতে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকে।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, অর্থনৈতিক চাপ এবং জনমত বিবেচনায় এই কঠোর অভিবাসন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাস করতে ইচ্ছুক অভিবাসীদের জন্য শর্ত পূরণ করা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে।