পুলিশের লাঠিপেটা-কাঁদানে গ্যাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লংমার্চ ছত্রভঙ্গ, আহত অন্তত ১১

পুলিশের লাঠিপেটা-কাঁদানে গ্যাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লংমার্চ ছত্রভঙ্গ, আহত অন্তত ১১

তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের লংমার্চে বাধা দিয়েছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের সামনে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে শুরু হয় এ সংঘর্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহারে লংমার্চ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে মৎস্য ভবন মোড়ের দিকে সরে যান। এ ঘটনায় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে পুলিশ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, ‘আবাসন ভাতা, প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর অর্থায়নের দাবিতে’ তাঁরা এই লংমার্চের আয়োজন করেন। আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বর থেকে যাত্রা শুরু করেন শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা। মূল লক্ষ্য ছিল যমুনার দিকে পদযাত্রা করে দাবি আদায়ের বার্তা দেওয়া।

May be an image of 3 people

তবে কাকরাইল এলাকায় পৌঁছানোর পরই পুলিশ তাদের পথ আটকে দেয়। ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হলে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। জলকামান ব্যবহার করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয় লংমার্চকারীদের।

পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা

আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুলিশের হামলায় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শিক্ষকও রয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও জানিয়েছেন সহপাঠীরা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “জনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আমরা তাদের নিরুৎসাহিত করেছি। কিন্তু আন্দোলনকারীরা রাস্তা দখল করে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে আমরা বাধ্য হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।”

আহত একজনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

তিনি আরও বলেন, “প্রথমে আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা উগ্র আচরণ করায় ধীরে ধীরে কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করতে হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যা প্রয়োজন তা-ই করা হয়েছে।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে উচ্চমূল্যের ভাড়া দিয়ে বাইরে থাকতে হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন না হওয়ায় শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে নানা সংকটে পড়তে হচ্ছে বলে দাবি তাঁদের।

May be an image of 7 people and text that says 'BANGLADESH BANG -POLICE L POLICESA POLICE POLIO POr'

গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠালতলায় ‘জুলাই ঐক্য’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে সভা করেন। সেখান থেকে আজকের লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষিত হয়। তার আগে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু সেখানে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় আন্দোলন আরও তীব্র হয়।

আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর লংমার্চ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়

ঘটনার পর আন্দোলনকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানাতে বের হয়েছিলাম। আমাদের ওপর এমন হামলা অপ্রত্যাশিত। এটা শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, গোটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অবহেলার প্রতিফলন।”

তাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচির ইঙ্গিত দিয়েছেন ছাত্র-শিক্ষক নেতারা।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ বৃহত্তর কর্মসূচিরও ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।