যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনায় বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনায় বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে কৌশলগতভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের পাল্টা শুল্কের চাপ মোকাবিলা এবং বাণিজ্য সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

শুল্ক ছাড় ও পণ্যের তালিকা প্রস্তুত

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিযোগ্য পণ্যের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ তালিকায় তুলা, এলপিজি, সয়াবিন, গম, প্রাকৃতিক গ্যাস, ভুট্টা, স্বর্ণসহ প্রায় ৪০টি পণ্য রয়েছে। পাশাপাশি আরও ১০০টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত করার জন্য প্রস্তাব তৈরি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
তালিকা চূড়ান্ত করে শিগগিরই ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (USTR)-এর কাছে পাঠানো হবে।

বাণিজ্য ঘাটতি ও রাজনৈতিক বার্তা

২০২৩ সালে বাংলাদেশ তুলা ও এলপিজির মতো পণ্য বিপুল পরিমাণে আমদানি করলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে সে পরিমাণ ছিল খুবই কম। এ অবস্থায় আমদানির উৎস পরিবর্তনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ‘বিশেষ গুরুত্বের বার্তা’ দিতে চায় বাংলাদেশ।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো— যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য আনা ও ইতিবাচক বার্তা দেওয়া।”

ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক চাপ ও বাংলাদেশ

চলতি বছরের ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ৫৭টি দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এর মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ কিছু পণ্যের ওপর ৩৭% পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, যদিও তা তিন মাসের জন্য স্থগিত রয়েছে। ১০% শুল্ক এখনও কার্যকর, যা বাংলাদেশের রপ্তানিকে চাপে ফেলেছে।

এই পরিস্থিতি সামাল দিতেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির হার বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা এগোচ্ছে

গত ৭ মে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (USTR) জেমিসন গ্রেয়ার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের কাছে চিঠি দিয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনার প্রস্তাব দেন। তিনি শ্রম অধিকার, ডিজিটাল বাণিজ্য এবং শুল্ক-বাধা হ্রাসের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।

জেনারেল মোটরস ও বোয়িংকে অগ্রাধিকার

যুক্তরাষ্ট্র থেকে গাড়ি (General Motors) ও উড়োজাহাজ (Boeing) আমদানিতেও অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। এলএনজি ও প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতেও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে।

অশুল্ক বাধা কমাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে মার্কিন কোম্পানিগুলোর বকেয়া পরিশোধ শুরু করেছে এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নকল সফটওয়্যার, মান নির্ধারণ জটিলতা, বিনিয়োগ বিধিনিষেধ ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

মূল লক্ষ্য

  • বাণিজ্য ঘাটতি কমানো

  • রপ্তানিতে শুল্ক সুবিধা বাড়ানো

  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা

  • আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপ মোকাবিলা