চাঁদা দাবি: আসামির সভাপতি পদ ফিরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভে উত্তাল
- বাংলাদেশময়মনসিংহ
- 1 minute read
বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোনার ১নং মৌগাতী ইউনিয়ন বিএনপি-তে নেতৃত্বের বিতর্ককে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি। সম্প্রতি বিএনপি’র ইউনিয়ন সভাপতি আবুল কালাম আজাদ রেনু মিয়াকে চাঁদা দাবিতে গরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্ছিত করার এবং এর প্রতিবাদ করায় ২০১৩ সালে শাপলা চত্ত্বরে গুলিবিদ্ধ হেফাজত নেতা আনিছুর রহমানের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও অর্থ লুটের অভিযোগে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তবে, অব্যাহতির মাত্র কিছুদিন পরই গত ২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার বিকেল ৩টায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ড. মো. আনোয়ারুল হক রেনু মিয়ার বাসভবনে যাওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। রেনু মিয়ার অনুসারীরা প্রচার করতে থাকেন যে, তার সভাপতির পদ পুনর্বহাল করা হতে পারে। এই খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ইউনিয়ন মৌগাতি ইউনিয়ন বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
কাঞ্চনপুরের ভাওয়াল বিল সংলগ্ন মেইন রোডে নেতাকর্মীরা দুই পাশে দাঁড়িয়ে ড. আনোয়ারুল হককে স্বাগত জানাতে অপেক্ষা করলেও পরে খবর আসে, তিনি গোপনে অন্য একটি গলি রাস্তা হয়ে রেনু মিয়ার বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন।
এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে উপস্থিত কয়েক হাজার নেতাকর্মী। তাঁরা দ্রুত নোয়াপাড়া মোড়ে রওনা হন এবং “আওয়ামী লীগের দালাল রেনু মিয়াকে মানি না, মানবো না”, “চাঁদাবাজ রেনুকে সভাপতি হিসেবে কেউ মানে না” – এমন সব স্লোগান দিতে শুরু করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়নের সাবেক তিনবারের সভাপতি ও চেয়ারম্যান মাহবুবুল ইসলাম কমল, সাধারণ সম্পাদক শাজাহান খান, ছাত্রদলের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম আয়াতুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রুবেল মিয়া, যুবদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর তালুকদার, কৃষক দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম, শ্রমিক দলের সভাপতি মিলন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মুমেন মিয়াসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের দুই-তিন হাজার কর্মী-সমর্থক।
তাদের দাবি, রেনু মিয়া একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে শিক্ষক লাঞ্ছনা, চাঁদাবাজি ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। তাকে পুনর্বহাল করা হলে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা তা মেনে নেবে না।
এছাড়াও বিএনপি’র অধিকাংশ নেতাকর্মীরা মনে করছেন, চাঁদার দাবিতে মাদরাসার অধ্যক্ষকে মারধর এবং অধ্যক্ষকে লাঞ্চিতের প্রতিবাদ করায় ২০১৩ সালে শাপলা চত্ত্বরে গুলিবিদ্ধ হেফাজত নেতাকে মারধর, তার বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও অর্থ লুটের অপরাধে নেত্রকোনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক ডা. আনোরুল হক তিনি আবুল কালাম আজাদ রেনু মিয়াকে দল থেকে বহিস্কার না করে সুকৌশলে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেন।
এর পেছনের কারণ, সামনে নেত্রকোনা জেলা বিএনপি’র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যার কারণে, সম্প্রতি রেনু মিয়া দুটি মামলার প্রধান আসামি এবং এক যুগ আগে একটি ধর্ষণ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি থাকা সত্ত্বেও দলের ভাবমুর্তি নষ্টকারী সেই রেনু মিয়াকে সপদে বহাল রাখার জন্য ডা. আনোয়ারুল হক আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। আহবায়ক পদ থেকে জেলা বিএনপি’র সভাপতি পদ পাওয়ার জন্য ডা. আনোয়ারের যত প্রচেষ্টা।
শুধু তাই নয়, বিগত ফ্যাসিস্টরা প্রশাসনকে যেভাবে ব্যবহার করেছে, ৫ আগস্টের পর হতে ডা. আনোয়ারুল হক ও তার ছোট ভাই কামরুল হক ঠিক সেভাবেই প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন। ডা. আনোয়ারুল হক এরমধ্যেই চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন। ক্ষমতায় না আসতেই এখনই সব প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ, এমপি বা মন্ত্রী হলে তো নেত্রকোনাকে গিলে খাবেন এমন জনশ্রুতি রয়েছে পুরো জেলাতে।
বিগত সরকারের সুবিধাবাদী ব্যক্তিরা জেলা বিএনপি’র আহবায়কের ভাই কামরুল হককে অর্থ দিলে ফ্যাসিস্ট ও দোসরদের নাম দলীয় ও রাজনৈতিক মামলায় জড়ানো হয় না। এরকম মামলা বাণিজ্য ছাড়াও জেলায় বিভিন্ন প্রকৌশল অধিদপ্তরে গাঁয়ের জোরে বিপুল অর্থের ঠিকাদারী কাজ ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কামরুল হকের বিরুদ্ধে। বিএনপি’র অধিকাংশ নেতাকর্মীরদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জেলা বিএনপির আহবায়ক ড. আনোয়ারুল হক এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় বিষয়টি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গড়াতে পারে।
নেত্রকোনার রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা রেনু মিয়াকে পুনর্বহালের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।